শাশ্বতী সরকার~অন্তর্লীন

কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। সমস্ত কাজ রহিত হয়ে একঘরে পড়ে থাকায় আত্রেয়ীর মাথায় নানা ভাবনার খেলা চলতে লাগল কিভাবে বিয়েটা বন্ধ করা যায় যাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। দিনরাত নানা ফন্দী আসতে লাগল মাথার মধ্যে। শেষে তিনিই জয়ী হলেন। কি করলেন কেউ জানতে পারল না,শৌর্যর বাড়ী থেকে ফোন এল পৌলমীকে বিয়ে করা শৌর্যর পক্ষে সম্ভব নয়, অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পৌলমীর ওপর দিয়ে এক সপ্তাহ ঝড় বয়ে গেছে। অফিসে প্রচণ্ড কাজের চাপ। বাড়ীতেও অশান্তিতে ঘুম হয় না। চোখের কোলে গভীর কালির ছাপ পড়ে গেছে, শরীর ও মন দুইই প্রচণ্ড অবসন্ন। এর মধ্যে মাথায় বাজ পড়ার মত খবরটা এল। শৌর্যর বাড়ী থেকে খবরটা দিয়েই ওদের সাথে যোগাযোগের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হল। সমস্ত নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন শৌর্যর বাড়ীর লোকেরা। তিনদিন অপেক্ষা করেও শৌর্য যখন অফিসে আসল না, শৌর্যর ঘনিষ্ঠ চারজন বন্ধুকে নিয়ে ওদের বাড়ী গেল পৌলমী।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

অন্তর্লীন
শাশ্বতী সরকার


এক


কদিন পরেই যে বাড়ীতে বিয়ের সানাই বাজার কথা সেখানে হঠাৎই তীব্র আকাশভেদী কান্নার রোল উঠল। সন্ত্রস্ত প্রতিবেশীরা ছুটে যেতে লাগলেন লাহিড়ী বাড়ীতে কি হয়েছে জানার জন্য। যাদের সাথে লাহিড়ী বাড়ীর সেরকম ঘনিষ্ঠতা নেই বা নতুন এসেছেন পাড়ায় তারা উৎকীর্ণ হয়ে জানলায় ও ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন অথবা রাস্তায় বেরিয়ে আসলেন যদি কিছু আঁচ পাওয়া যায় ঘটনার। একটু পরে জানা গেল,ও বাড়ীর মেয়ে আত্মহত্যা করেছে গলায় ওড়না জড়িয়ে। তাজ্জব প্রতিবেশীরা ভাবতেই পারলেন না অমন একটা শান্ত,নম্র,সুন্দর মেয়ে কি করে এমন করতে পারল!পাড়ায় লাহিড়ী বাড়ীরও ভদ্র রুচিশীল পরিবার বলে বেশ সুনাম আছে। তাহলে এমন কি কারণ থাকতে পারে যার জন্য এই নির্মম পথ বেছে নিতে বাধ্য হল মেয়েটা?সবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা ভাল মাইনের চাকরীতে জয়েন করেছিল। সামনেই বিয়েও তো ঠিক হয়ে গিয়েছিল মনে হয়। সন্দেহের কোন তল পান না প্রতিবেশীরা। লাহিড়ী বাড়ীতেও কি যেন একটা চেপে যাওয়া হচ্ছে। নানারকম কানাকানির পর মোদ্দা কথা যা দাঁড়ালো তা হল, একেবারে ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়ে কোন কারণে ভেঙে যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। পাত্র না কি কিছুতেই বিয়ে করতে রাজী হচ্ছিল না। 


দুই


ছোটবেলা থেকেই পৌলমী একটু অনাদরেই মানুষ হয়েছে। এই অনাদরটা ঠিক ওপর থেকে বোঝা যেত না। সচ্ছলতার কোন অভাব লাহিড়ী বাড়ীতে ছিল না। অনাদরটা ছিল মার আচরণের মধ্যে। এক অদ্ভূত শৈত্য ছিল মা ও মেয়ের সম্পর্কের মধ্যে যা সাধারণভাবে লক্ষ্য করা যায় না। অথচ পৌলমী ও তার বাবার প্রতি তার মা আত্রেয়ী যে কর্তব্যের কোন ত্রুটি রাখতেন তা নয়। বরং একটু বেশীই যেন কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন। প্রয়োজনের থেকে একটু বেশীই গুছিয়ে রাখতেন জিনিসপত্তর। অতিরিক্ত কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যে-রাত ঠিক ঠিক সময়ে খাবার চলে আসত মুখের সামনে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পৌলমী যে অভাব অনুভব করত তা হল একটু উষ্ণতার, একটু আদরের। মা কোনদিন তাকে আদর করে একটা চুমু খেয়েছেন কিনা মনে পড়ে না,কোনদিন পরীক্ষার সময়ও তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন বলে মনে পড়ে না,অসুখের সময় গায়ে-মাথায় কোনদিন হাত বুলিয়ে দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। শুধু ঠিক ঠিক সময়ে ওষুধ আর খাবার দিয়ে গেছেন। মাকে যেন যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই মনে হত না পৌলমীর। সংসারের কাজ ঠিক ঠিক সময়ে সেরেই ঠাকুরঘরে দরজা দিতেন মা দুইবেলা। পাক্কা দুই ঘণ্টা দুবেলা ঠাকুরঘরে কাটানো ছিল মার নিত্যদিনের অভ্যেস। বাকী সময় টিভি দেখা আর বইপড়াতেই কাটিয়ে দিতেন মা। বাবা সেই সকাল সাতটায় বেরিয়ে যেতেন কাজে, ফিরতেন রাত সাতটায়। তখন বাবার সাথেই সামান্য যা টুকটাক কথা হত পৌলমীর। তারপর বাবাও বসে যেতেন টিভি দেখতে। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলা ও রাজনীতির খবরগুলো দেখতেই পছন্দ করতেন বাবা। ও দুটোতেই পৌলমী বা ওর মার কোন ইন্টারেস্ট ছিল না বলে ওগুলো নিয়েও কোন আলোচনা হত না নিজেদের মধ্যে। রোজকার রুটিনই ছিল গভীর নিয়মে বাঁধা। বাবা আসা অবধি মা ঠাকুরঘরেই কাটিয়ে দিতেন। তারপর এসে গেলেই চা ও সন্ধ্যের হাল্কা খাবার দিয়ে মা বই পড়তে চলে যেতেন অন্য ঘরে। পৌলমী তার ঘরে কি করছে না করছে কোন খোঁজই নিতেন না কেউ। রাতে খাবার সময় শুধুমাত্র প্রয়োজনের বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হত তিনজনের মধ্যে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনরকম হাসিঠাট্টা, গল্প করা যেন নিয়মবিরুদ্ধ ছিল ও বাড়ীতে। এই মাকেই সম্পূর্ণ অন্যরূপে দেখত পৌলমী যখন কোন আত্মীয় তাদের বাড়ী বেড়াতে আসতেন বা মা যেতেন তাদের বাড়ীতে। কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে আড়াল থেকে পৌলমী দেখেছে তার মার এই অন্য রূপ। অনাবিল হাসিতে মাকে যে কি সুন্দর লাগত!ভীষণ ইচ্ছে করত মাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে কিন্তু ইচ্ছেটা বুকের মধ্যে চেপেই রেখে দিত পৌলমী, কোনদিনই প্রকাশ করে নি। ধীরে ধীরে ও প্রচণ্ড অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছিল। বাড়ীতে কেউ এলেও নিজের ঘর থেকে বেরোত না। মা এসে বলে যেতেন, “এ ঘরে এসে দেখা করে যাও,ওনারা কি ভাববেন!আক্কেল পছন্দ কিছুই হচ্ছেনা দেখছি। ”তাই বাধ্য হয়ে কিছুক্ষণ থেকেই আবার নিজের ঘরে ফিরে আসত সে। 


যতদিন পড়াশোনা চালিয়েছে ততদিন আর অন্য কোন দিকে মন দেয় নি পৌলমী। ওর বেশিরভাগ বন্ধুরাই প্রেম করত, ক্লাস বাঙ্ক করে সিনেমা দেখতে যেত। কিন্তু পৌলমীর লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাকরী জোগাড় করে বিয়ে করবে সে। পাত্র নিজেই পছন্দ করবে। এ বাড়ী থেকে না বেরোলে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিবাহিত জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত পৌলমী। যা যা সে বাড়ীতে পায় নি, তার সব দিয়ে ভরিয়ে দেবে নিজের বিবাহিত জীবন। নিজের জীবনকে সে গড়বে সম্পূর্ণ নতুন ছন্দে। এমন কি কল্পনায় নিজের সন্তানদেরও দেখতে পেত সে। হ্যাঁ, এক নয়,একাধিক সন্তানের মা হবে সে। তার মত একা নিঃসঙ্গ হবে না তার সন্তান। অন্ততঃ দুই সন্তানের মা তো সে হবেই যাতে তারা একাকীত্বে না ভোগে। চাকরীতে জয়েন করে মোটামুটি ওর পছন্দমত একটা ছেলেকেই মনে ধরল পৌলমীর। ছেলেটার নাম শৌর্য। শৌর্যকে ভাল লাগার কারণ ভীষণ এক কেয়ারিং ভাব আছে ওর মধ্যে অথচ কি জলি!ছেলেটার মধ্যে যেন দ্বৈতসত্তার প্রকাশ। একদিকে ভীষণ ম্যাচিওর অন্যদিকে কখনো কখনো ভীষণ ছেলেমানুষ। কিন্তু সে ছেলেমানুষীর মধ্যে কখনো কোন অবুঝপনা বা অন্যায় আবদার থাকত না। পৌলমীই প্রোপোজ করেছিল শৌর্যকে। ওর মত শান্ত, মিষ্টি, নরম মেয়েকে কেউই সহজে ফেরাতে পারত না। শৌর্যর মন যেহেতু তখনও কোথাও বাসা বাঁধেনি, পৌলমীর আবেদন ও ভালবাসায় বিনা দ্বিধায় বাঁধা পড়ে গিয়েছিল শৌর্য। মাত্র পাঁচ মাসেই তাদের ভালবাসা এতটাই গাঢ় হয়ে এসেছিল যে একে অপরকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব ছিল না সে মুহুর্তে। শৌর্যর বাড়ীর সকলেই সানন্দে তাদের বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। পৌলমীর বাবাও সম্পূর্ণ রাজী ছিলেন তাদের বিয়েতে কারণ অমতের সামান্য কোন জায়গা,কোন ফাঁকই ছিল না। বংশ, গোত্র, সামাজিক অবস্থান, কায়িক গঠন সব দিক থেকেই দুজনের ছিল রাজযোটক মিল। তবুও কি এক অজানা কারণে পৌলমীর মা কিছুতেই রাজী হলেন না এ বিয়েতে। পৌলমীরও জেদ চেপে বসল। শেষে এমন পরিস্থিতি দাঁড়াল,বাড়ীতে মা-মেয়ের মুখ দেখাদেখি সম্পূর্ণ বন্ধ। পৌলমীর বাবা পড়লেন মহা ফাঁপরে। বিপদ দেখে কিছু আত্মীয় স্বজন যাদের আত্রেয়ী অর্থাৎ পৌলমীর মা পছন্দ করেন তাদের ডেকে আনলেন বাড়ীতে। তারা সর্বান্তঃকরণে বোঝালেন আত্রেয়ীকে,কেন তিনি রাজী নন বারবার জানতে চাইলেন। কিন্তু আত্রেয়ী নিজেও ঠিক জানেন না কেন তিনি রাজী নন,শুধু বলে চলেছেন ওই ছেলেটিকে দেখে তার ভাল লাগে নি। তিনি কিছুতেই ওকে মেনে নিতে পারবেন না। পৌলমী যদি ওকে বিয়ে করে তাহলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। আত্মীয়দের বোঝানো সব বিফলে গেল,আত্রেয়ীকে কিছুতেই রাজী করানো গেল না এ বিয়েতে। পৌলমীর বাবা ওর মার অমতেই আত্মীয়দের সাহায্য নিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলবেন বলে মনস্থির করে ফেললেন। ভাবলেন বিয়ে হয়ে গেলে পরে ঠিকই মেনে নিতে বাধ্য হবেন আত্রেয়ী, একমাত্র মেয়ে, না মেনে যাবেন কোথায়!সময়ই সব ঠিক করে দেবে। কিন্তু আত্রেয়ী নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে ঠাকুরঘরে দরজা দিয়ে পড়ে থাকলেন। বাড়ীতে এক থম্‌থমে পরিবেশ তৈরি হল। 


কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। সমস্ত কাজরহিত হয়ে একঘরে পড়ে থাকায় আত্রেয়ীর মাথায় নানা ভাবনার খেলা চলতে লাগল কিভাবে বিয়েটা বন্ধ করা যায় যাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। দিনরাত নানা ফন্দী আসতে লাগল মাথার মধ্যে। শেষে তিনিই জয়ী হলেন। কি করলেন কেউ জানতে পারল না,শৌর্যর বাড়ী থেকে ফোন এল পৌলমীকে বিয়ে করা শৌর্যর পক্ষে সম্ভব নয়, অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পৌলমীর ওপর দিয়ে এক সপ্তাহ ঝড় বয়ে গেছে। অফিসে প্রচণ্ড কাজের চাপ। বাড়ীতেও অশান্তিতে ঘুম হয় না। চোখের কোলে গভীর কালির ছাপ পড়ে গেছে, শরীর ও মন দুইই প্রচণ্ড অবসন্ন। এর মধ্যে মাথায় বাজ পড়ার মত খবরটা এল। শৌর্যর বাড়ী থেকে খবরটা দিয়েই ওদের সাথে যোগাযোগের সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া হল। সমস্ত নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন শৌর্যর বাড়ীর লোকেরা। তিনদিন অপেক্ষা করেও শৌর্য যখন অফিসে আসল না, শৌর্যর ঘনিষ্ঠ চারজন বন্ধুকে নিয়ে ওদের বাড়ী গেল পৌলমী। গিয়ে দেখল ওদের ফ্ল্যাট লক করা। প্রতিবেশীরা কেউ কারো খবর রাখেন না। কেউই কিছু বলতে পারলেন না ওদের সম্বন্ধে। বাড়ী ফিরে শেষ রাতে আর চাপ নিতে পারল না পৌলমী। এক অতৃপ্ত আত্মা চিরতরে বিদায় নিল এ পৃথিবী থেকে। 


তিন


শৌর্যর বয়স এখন প্রায় ষাটের কাছাকাছি। রিটায়ার করার সময় হয়ে এসেছে। প্রচুর সম্পত্তির মালিক। বিয়ে করেছেন কিন্তু সন্তানাদি হয়নি। খবর পেলেন এক অশীতিপর বৃদ্ধা তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। খুবই অবাক হলেন শৌর্য, তার সঙ্গে কি দরকার থাকতে পারে কোন অপরিচিত বৃদ্ধার!গাড়ী করে এসেছেন তিনি,একজন আয়া ধরে ধরে নিয়ে এল তাকে। শৌর্য তাড়াতাড়ি বৈঠকখানা ঘরে আরাম করে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন। কোথায় যেন দেখেছেন সেই বৃদ্ধাকে,কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলেন না কোথায়!। বৃদ্ধা সেই আয়াকে গাড়ীতে গিয়ে বসতে বললেন। শৌর্যর খবর নিলেন। বললেন একান্ত গোপন কিছু কথা আছে শৌর্যর সঙ্গে যা না বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। শৌর্য ইচ্ছে করলে তার স্ত্রীকে ডাকতে পারেন অথবা নাও পারেন কিন্তু বাইরের কেউ থাকা চলবে না। শৌর্য ডেকে নেন তার স্ত্রীকে। তার জীবনের সব কথাই তার স্ত্রীর জানা তাই এখনও আড়ালের কোনোই প্রয়োজন নেই। বৃদ্ধা তার পরিচয় দিয়ে শুরু করেন, তিনি পৌলমীর মা আত্রেয়ী। তিরিশ বছর আগে তিনিই একদিন শৌর্যর মাকে উড়ো চিঠি দেন একজনের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে। চিঠিতে তিনি নিজেকে পৌলমীর মা পরিচয় দিয়ে লেখেন খুব ছোটবেলায় পৌলমী তার এক আত্মীয়ের দ্বারা বীভৎসভাবে ধর্ষিত হয় এবং ইনফেকশন হয়ে গিয়ে তার জরায়ুটি বাদ দিতে হয়। খুব ছোটবেলায় হওয়ায় এই জরায়ু বাদ দেওয়ার কথা পৌলমী জানে না। এখন হঠাৎ এই সত্য জেনে পৌলমী আঘাত পেয়ে কিছু করে না বসে এই কারণে পৌলমীকেও তিনি কিছু জানাতে পারছেন না, বিবেকের তাড়নায় শৌর্যর ফ্যামিলিকেও না জানিয়ে পারছেন না। এরপরও যদি শৌর্যর মা বাবা ও শৌর্য রাজী থাকে তাহলেই এ বিয়েতে তারাও মত দিতে পারবেন। কিন্তু সে ছিল সম্পূর্ণই মিথ্যে। আত্রেয়ী বুঝতে পারতেন না কেন তিনি এই বিয়েতে রাজী হতে পারছিলেন না। তিনি নিজেও ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। মেয়ে মারা যাওয়ার দুবছর পর তিনি কাউন্সেলিং করিয়েছিলেন। তখন সাইকোমেট্রি করে জানা গিয়েছিল,আত্রেয়ীরও বিয়ের আগে একটি ছেলের সাথে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আত্রেয়ীর রক্ষণশীল বাবা সে সম্পর্ক মেনে না নিয়ে নিজের পছন্দ করা পাত্র পৌলমীর বাবার সাথে আত্রেয়ীর জোর করে বিয়ে দেন। পরবর্তীকালে আত্রেয়ী যে খুব অসুখী হয়েছিলেন এ বিয়েতে তা নয়, কিন্তু সারাজীবন ধরে কোথায় যেন বাবার ওপর রাগ ও বিদ্বেষ থেকে গিয়েছিল। সেই কারণেই তার অবচেতন মন কিছুতেই তার মেয়ের লাভ-ম্যারেজ মেনে নিতে পারছিল না। প্রতিশোধস্পৃহা বশেই তার এ আপত্তি ছিল। এ সত্যও আত্রেয়ীর সচেতন মন প্রথমে গ্রহণ করতে চাইছিল না, পরে একটু একটু করে বুঝেছিলেন, হ্যাঁ, এটাই চরম সত্য। দুবছর পরে না গিয়ে তিনি যদি তখনই মনের জটিলতা কাটাতে সাইকোলজিস্টের কাছে যেতেন তাহলে ওই চরম দুর্ঘটনা ঘটত না। শৌর্যর হাত ধরে ক্ষমা চাইতে থাকেন আত্রেয়ী আর দর্‌দর্‌ করে জল পড়তে থাকে চোখ দিয়ে। শীর্ণ শরীর সে ভার যেন আর বইতে পারে না।

~সমাপ্ত~

শাশ্বতী সরকার